কানাডায় পিআর পাওয়ার জনপ্রিয় উপায় স্টার্টআপ ভিসা
প্রকাশিত : ১৮:৩৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩
বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি (পিআর) বা স্থায়ী অভিবাসন দিতে কানাডার প্রাদেশিক সরকারগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের বিজনেস প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো স্টার্টআপ ভিসা প্রোগ্রাম। এর অধীনে যেকোনো ব্যক্তি সরাসরি কানাডার পিআর পেতে পারেন। কেবল ব্যক্তি নন, শর্ত পূরণ করতে পারলে পরিবারের সদস্যসহই মিলতে পারে কানাডার পিআর। তবে এর জন্য থাকতে হবে উপযুক্ত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, আর্থিক সক্ষমতা।
এ জন্য আপনাকে কানাডার সরকারকে বোঝাতে হবে যে আপনি সে দেশে একটি ইনিক ব্যবসা শুরু করতে সক্ষম যা সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এমন ব্যবসায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ অংশীদার হতে হবে আপনাকে। অথবা আপনারা পাঁচ জন মিলেও সেই ৫০ শাতাংশের অংশীদার হতে পারেন। সেক্ষেত্রে পাঁচ জন অংশীদারই আবেদন করতে পারবেন।
এখানেই শেষ নয়, কানাডিয়ান কোনো প্রতিষ্ঠান আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা পছন্দ করে এবং আপনার প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে সম্মত হয় তবেই তারা ‘লেটার অব সাপোর্ট’ দেবে। এর সঙ্গে কানাডার অভিবাসন বিভাগ তথা আইআরসিসি থেকে একটি ‘কমিটমেন্ট সার্টিফিকেট’ও পাওয়া যাবে। তখন পিআরের জন্য আবেদন করা যাবে।
এছাড়া ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কানাডা সরকার নির্ধারিত ‘সিএলবি লেভেল ৫’ থাকতে হবে। সিএলবি লেভেল এর কম হলে চলবে না। চতুর্থত, কানাডায় গিয়ে থাকা-খাওয়ার আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণের জন্য ন্যূনতম ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে চার জনের পরিবারের জন্য কমপক্ষে ২৪ হাজার ৫৫৩ কানাডিয়ান ডলার দেখাতে হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ টাকা।
অন্যান্য বিজনেস প্রোগ্রাম অথবা স্টুডেন্ড ভিসায় কানাডায় যাওয়ার সুযোগ পেলে সেখানে যাওয়ার পরও বিভিন্ন ধরনের শর্ত পূরণের পর তবেই পিআর মেলে।
পিআর পেলে কী কী অধিকার ভোগ করতে পারবেন?
পিআর স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কানাডা পিআর কার্ড ইস্যু করে থাকে। পিআর কার্ডকে এক অর্থে আমেরিকার গ্রিন কার্ডের কানাডিয়ান রূপ বলা চলে। পিআর কার্ডের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে যা উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই, তা নবায়ন করতে হয়। অর্থাৎ, এটি কোন স্থায়ী ডকুমেন্ট নয়। এভাবেই দীর্ঘদিন আপনি কানাডায় অবস্থান করতে পারবেন।
কানাডায় পিআর স্ট্যাটাস অর্জনে সক্ষম হলে আপনি যেসব সুবিধা ভোগ করার অধিকার পাবেন:
কানাডিয়ান নাগরিকদের মতো সকল সামাজিক সুযোগ-সুবিধাভোগ করতে পারবেন। কানাডার যেকোনও প্রদেশ বা অঞ্চলে বসবাস করা, কাজ করা, বা লেখাপড়া করার সুযোগ পাবেন। কানাডিয়ান আইন, অধিকার ও স্বাধীনতার সনদ অনুসারে সুরক্ষাপ্রাপ্তির সুবিধা এবং পিআর হিসেবে বসবাসের নির্দিষ্ট মেয়াদপূর্তির পর কানাডার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের অধিকারও পাবেন।
পিআর প্রাপ্তরা যেসব কাজ করতে পারেন না তা হলো, কানাডার নির্বাচনে ভোট দেওয়া, বা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, কিছু সরকারি চাকরি যেখানে উচ্চ-স্তরের সুরক্ষা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয় সেসবের প্রার্থী হওয়া, এসব করতে পারবেন না।
কানাডার নিরাপত্তা বা এজাতীয় কোন গুরুতর কারণে সন্দেহ হলে ইমিগ্রেশন অফিসার একজন পিআর এর কানাডায় পুনর্প্রবেশ প্রয়োজনে আটকে দিতে পারেন। মেয়াদোত্তীর্ণ পিআর কার্ড দিয়েও একজন পিআর কানাডায় পুন:প্রবেশে করতে পারেন না।
কানাডায় পিআর স্ট্যাটাস গ্রহণের পর তা বজায় রাখতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। যেমন, একজন পিআরকে সাধারণভাবে প্রতি পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে কানাডায় সশরীরে অন্তত দুই বছর বসবাস করতে হয়। এর কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। যেমন, একজন পিআর তার কানাডিয়ান নাগরিক স্বামী, স্ত্রী, কমন-ল পার্টনার, পিতা বা মাতার সাথে একত্রে কানাডার বাইরে যেটুকু সময় কাটাবেন সেই সময়টা তিনি কানাডায় বসবাস করেছেন বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া, একজন পিআর যদি কোনও কানাডিয়ান ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে কানাডার বাইরে অবস্থান করেন সে সময়টুকুও তিনি কানাডায় বসবাস করেছেন বলে গণনা করা হয়। আরেকটি বিষয় হলো, কানাডার সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া নিয়মকানুনগুলো যথাযথভাবে মেনে না চললে পিআর স্ট্যাটাস হুমকির মুখে পড়তে পারে, তবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিআর স্টেটাস রহিত হয়ে যায় না।
পিআর স্ট্যাটাস ত্যাগ বা রহিত করতেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
পিআর পাওয়ার পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে কী করবেন?
কানাডিয়ান সিটিজেন হতে হলে একজন অভিবাসীকে প্রথমে কানাডার পিআর হতে হয়। কানাডার পিআররা ভিন্নদেশের পাসপোর্টের মালিক, কানাডার নয়। কানাডিয়ান পাসপোর্ট পেতে হলে প্রথমে কানাডার সিটিজেন বা নাগরিক হতে হয়। পিআর হিসেবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কানাডায় সুনাগরিক হিসেবে বসবাসের পর আরও কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে একজন পিআর কানাডার সিটিজেন হবার আবেদন দাখিল করতে পারেন।
সিটিজেনশিপের আবেদন অনুমোদিত হলে কানাডার প্রতি আনুগত্যের শপথবাক্য পাঠের মাধ্যমে কানাডার নাগরিকত্বের সনদ দেওয়া হয়। একজন কানাডিয়ান পাসপোর্টধারী পৃথিবীর প্রায় সব দেশ ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন, যা একজন কানাডিয়ান পিআর নাও পারতে পারেন।
এসবি/
আরও পড়ুন